সরকারি কর্মীদের জন্য বড়দিনের উপহার, ১ লা জানুয়ারি থেকে বেতন ও DA বৃদ্ধির ঘোষণা করল সরকার | Govt Job Employee DA
দীর্ঘদিন ধরে সরকারি কর্মীদের বেতন বাড়ানো ও অষ্টম পে কমিশন গঠন করা নিয়ে নানান জল্পনা চলছিল। তবে এবারে সেই সব জল্পনার দ্রুত অবসান ঘটতে চলেছে। সরকারি কর্মীদের বেতন বৃদ্ধি ও নতুন পে কমিশন গঠন করা নিয়ে বিরাট বড়ো আপডেট ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী নতুন বছরের ১ লা জানুয়ারি থেকে কার্যকর হচ্ছে নতুন নিয়ম। কি সেই নতুন নিয়ম? জানতে প্রতিবেদনটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকার অধীনস্থ কর্মীরা সপ্তম পে কমিশন এর আওতায় রয়েছেন। চলতি বছরের গত নভেম্বর মাসে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের আরও ৪% হারে DA বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফলে বর্তমানে তারা ৫৩% DA এর সুবিধা ভোগ করছেন।
এতসব কিছুর পরও কিছুদিন যাবৎ কেন্দ্রীয় সরকার অধীনস্থ কর্মীদের মধ্যে অষ্টম পে কমিশন কার্যকর করা নিয়ে জল্পনা চরম সীমায় পৌঁছেছে। এতদিন ধরে কেন্দ্রীয় সরকার তার অধীনস্থ সকল কর্মীদের নিয়ম মেনে সঠিক সময় মতো ধাপে ধাপে DA এর পরিমাণ বাড়িয়ে এসেছে। আর তার ফলে বর্তমানে তারা ৫৩% DA এর সুবিধা লাভ করছেন। সেই কারনেই তারা আশা করছেন যে খুব তাড়াতাড়িই আবারো কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে নতুন পে কমিশন অর্থাৎ অষ্টম পে কমিশন চালু করার সুখবর ঘোষণা করা হবে। তবে সে গুড়ে বালি, কেন্দ্রীয় সরকার এবার তার অধীনস্থ কর্মীদের সম্পূর্ণ ভাবে আশাহত করল।
এরপর থেকে আর কথায় কথায় বাড়বে না DA পরিমাণ। এবার থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির হিসেবে নয়, কর্মীদের বেতন বাড়ানো হবে তাদের কাজের দক্ষতার উপর ভিত্তি করে। যে কর্মী তার নিজের কাজে যত বেশি দক্ষতা দেখাতে পারবেন সেই অনুযায়ী তার বেতন বাড়ানো হবে।
বিগত কিছু মাস যাবৎ কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের মধ্যে অষ্টম পে কমিশন কার্যকর করার বিষয়টি নিয়ে চরম উত্তেজনা দেখা যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের এহেন আচরণ নিয়ে পার্লামেন্টে সরাসরি প্রশ্নও উঠেছে। এই প্রসঙ্গে আমাদের দেশের অর্থ প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরী সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে, নতুন করে কোনো পে কমিশন গঠন করার চিন্তাভাবনা আপাতত কেন্দ্রীয় সরকার করেনি। বরং কর্মীদের বেতন বাড়ানো ও অষ্টম পে কমিশন কার্যকর করা নিয়ে এক নতুন নিয়ম চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
এই নতুন নিয়ম চালু হলে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের একদিকে যেমন অনেক সুবিধা হবে অন্যদিকে তেমনি আবার তাদের বেশ কিছু অসুবিধারও সন্মুখীন হতে হবে। এই নতুন নিয়মের ফলে যে যে সুবিধা গুলি হবে তা হল-
১) কাজের দক্ষতার উপর ভিত্তি করে বেতন বৃদ্ধি হলে তা যথোপযুক্ত হবে। সাম্প্রতিক সময়ে প্রতি দশ বছর বাদে বাদে পে কমিশন গঠন করা হয়। সেই কারনে সরকারি কর্মীদের টানা দশটা বছর বেতন বৃদ্ধির জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকতে হয়। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজের দক্ষতার উপর নির্ভর করে বেতন বাড়ানো হলে কর্মীদেরকে আর এই দীর্ঘ সময় ধরে বেতন বাড়ার অপেক্ষায় থাকতে হবে না।
২) সরকারি কর্মীদের কাজের প্রতি একাগ্ৰতা ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে পারদর্শী হয়ে উঠতে এই নতুন নিয়ম অনেকখানি সাহায্য করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
৩) এই নতুন নিয়ম চালু হলে সরকারি কর্মীদের বেতন বৃদ্ধি আরও দ্রুত ও স্বচ্ছ ভাবে হবে। যেমন ধরুন ষষ্ঠ পে কমিশন অনুযায়ী যেখানে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের ন্যুনতম বেতন ৭,০০০ টাকা ছিল সেখানে সপ্তম পে কমিশন চালু হওয়ার পর তাদের ন্যুনতম বেতনের পরিমাণ ৭,০০০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৮,০০০ টাকা। উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মীদের ন্যুনতম বেতনের পরিমাণ বেড়ে হয়েছে আড়াই লক্ষ টাকা। তবে কাজের দক্ষতার উপর নির্ভর করে বেতন বাড়ানো হলে এই বৈষম্যতা দূর হবে।
আরো পড়ুন: নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে সকল রাজ্যবাসীকে ১২,০০০ টাকা করে দিচ্ছে রাজ্য সরকার, আবেদন করলেই পাবেন
অন্যদিকে এই নতুন নিয়মের ফলে যে যে অসুবিধা গুলি হবে সেগুলি হল-
১) বর্তমানে সরকারি চাকরিতে যার পদ মর্যাদা যত বেশি তার বেতনও তত বেশি। কিন্তু নতুন নিয়মের আওতায় বেতন বৃদ্ধি শুরু হলে নীচ পদস্থ কর্মীরা যদি ভালো কাজ করেন তাহলে তাদের বেতনের পরিমাণ উচ্চপদস্থ কর্মীদের তুলনায় বেড়ে যাবে। ফলে যোগ্যতার মানদন্ড সঠিক থাকবে না।
২) সরকারি চাকরিতে যদি দক্ষতার ভিত্তিতে বেতন দেওয়া শুরু হয় তাহলে সরকারি চাকরি পাওয়ার আশা অনেকের হারিয়ে যাবে। কারন এখনকার দিনে উচ্চ বেতনের জন্যেই সবাই সরকারি চাকরি খোঁজেন। কিন্তু নতুন নিয়ম এলে সেই বেতন কাঠামো আর থাকবে না।
৩) সাম্প্রতিক সময়ে বছরে দুবার নিয়ম করে DA বাড়ে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের। তবে নতুন নিয়ম চালু হলে পুরনো নিয়ম অনুযায়ী আর বছরে দুবার DA বাড়বে কিনা সেই নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।
এই নতুন নিয়ম কার্যকর করা নিয়ে এখনো পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে কোনো রকম অফিসিয়াল অ্যানাউন্সমেন্ট করা হয়নি। তবে কেন্দ্রীয় সরকারকে তার অধীনস্থ কর্মীদের ভালো মন্দ বিচার করে একটা না একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হতেই হবে যত শীঘ্র সম্ভব। তাই কবে কেন্দ্রীয় সরকার এই বিষয়ে পাকাপাকি সিদ্ধান্ত নেবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।
আরও পড়ুন: CLICK HERE